অল্প পরিশ্রমে বেশি আয় করুন



বাংলাদেশের অনেক বসত বাড়ির আনাচে-কানাচে অসংখ্য ছোট বা মাঝারি পুকুর, ডোবা, নালা, জলাশয় রয়েছে যেখানে বছরে পাঁচ থেকে আট মাস (৫-৮ মাস) পানি থাকে । মাছ চাষীসহ অনেকের ধারনা এসব জলাশয়ে মাছ চাষ সম্ভব না । তাই এসব জলাশয় বছরের পর বছর পতিত থাকে ।

অথচ অনেক ছোট জাতের মাছ আছে যেমন-পুঁটি, সরপুঁটি, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা ইত্যাদি, যাদেরকে এসব জলাশয়ে অল্প খরচে এবং সহজে চাষ করা যায় ।এতে একদিকে পতিত জলাশয়ের সদ্ব্যবহার হয় অন্যদিকে মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে পারিবারিক আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয় করা সম্ভব ।তেলাপিয়ানাইলোটিকা এমন দুটি প্রজাতির মাছ যাদেরকে ঐ পরিবেশে অল্প সময়ে চাষ করা যায়
কেন চাষ করবেন তেলাপিয়া ও নাইলোটিকা ?
·       তেলাপিয়া ও নাইলোটিকা উচ্চ ফলনশীল মাছ
·       ৩/৪ ফুট গভীরতায় কম সময়ে এদের দেহ অধিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়
·       তুলনামূলক কম খরচে এবং সহজ ব্যবস্থাপনায় বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়
·       এরা সবরকম খাবার খায়
·       সহজে রোগাক্রান্ত হয় না
·       অতি সহজে এদের পোনা উৎপাদন করা যায়
·       অল্প পুঁজিতে চাষ করা যায়
·       খেতে বেশ সুস্বাদু
·       বাজারে চাহিদাও বেশি
তেলাপিয়া ও নাইলোটিকা চাষ পদ্ধতি:
তেলাপিয়া ও নাইলোটিকা চাষ করতে হলে আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে ।
ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে নিচে আলোচনা করা হল :
পুকুর প্রস্তুতি:
 তেলাপিয়া ও নাইলোটিকা মাছ চাষের জন্যে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে যেখানে মৌসুমে ২ মিটার বা ৩/৪ ফুট পানি থাকে ।এক্ষেত্রে পুকুর বা জলাশয়ের আয়তন ১০-২০ শতাংশ হলে ভাল হয় তবে এর চেয়ে ছোট  পুকুর বা জলাশয়ে এই মাছ চাষ করা যায় ।পোনা ছাড়ার আগেই রাক্ষুসে বা অবাঞ্ছিত মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে ।এরপর পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি (এক কেজি) হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে ।চুন প্রয়োগের ৩-৪ পরে প্রতি শতাংশে ৩-৪ কেজি হারে পঁচা গোবর প্রয়োগ করতে হবে ।গোবর প্রয়োগের এক সপ্তাহ পর জলাশয়ের পানি সবুজাভ হলে পোনা ছাড়তে হবে ।
যদি পানির রং সবুজ বর্ণ ধারণ না করে তবে সেক্ষেত্রে রাসায়নিক সার যেমন- ইউরিয়া এবং টি.এস.পি. প্রতি শতাংশে যথাক্রমে ১০০ ও ২০০ গ্রাম হারে জলাশয়ে প্রয়োগ করলে পানির রং সবুজ হবে এবং তখনই পোনা ছাড়তে হবে ।

কেমন পোনা এবং কিভাবে ছাড়তে হবে?  
এরকম মৌসুমী জলাশয়ে নাইলোটিকা ও মনোসেক্স (একলিংগ) তেলাপিয়া চাষ করা অধিক লাভজনক । ৮-১০ গ্রাম ওজনের ২-৩ ইঞ্চি আকারের ৬০-৮০ টি পোনা প্রতি শতাংশে ছাড়তে হবে ।সবসময় বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুস্থ ও সবল পোনা ছাড়তে হবে ।পোনা সংগ্রহের পর পোনাসহ পোনা- ধারনকারী পাত্র মাছ চাষের জন্য নির্বাচিত জলাশয়ের পানিতে ২৫-৩০ মিনিট রাখতে হবে । এর ফলে পোনা-ধারনকারী পাত্রের পানি এবং জলাশয়ের পানির তাপমাত্রা সমান হয়ে যাবে এবং পোনা মৃত্যুর হারও কম হবে ।এরপর পোনা-ধারনকারী পাত্র একদিকে কাত করে ধরতে হবে যতক্ষন না সব পোনা জলাশয়ের পানিতে চলে যায় ।এসময় কোন পোনা দুর্বল বা মৃত দেখা গেলে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে ।

পোনা ছাড়ার পর করণীয়:
পোনা ছাড়ার পরদিন জলাশয়ের চারপাশ ভাল ভাবে দেখতে হবে যে কোন পোনা মারা গেছে কিনা এবং মৃত পোনা দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে । পোনা ছাড়ার পরদিন থেকে জলাশয়ে যে পরিমান মাছ আছে তাদের মোট শারীরিক ওজনের শতকরা ৪-৬ ভাগ মিহি চাউলের কুঁড়া সমান দু-ভাগ করে সকালে ও বিকালে পানিতে ছড়িয়ে দিতে হবে ।প্রতিদিন কি পরিমান খাবার দিতে হবে তা প্রতিমাসে একবার জাল টেনে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারন করতে হবে ।
চাউলের কুঁড়ার পাশাপাশি জলাশয়ে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির জন্য ১৫ দিন পর পর প্রতি শতাংশে ২ কেজি পঁচা গোবর বা ১ কেজি হারে হাঁস/মুরগীর বিষ্ঠা প্রয়োগ করা যেতে পারে ।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে পোনা ছাড়ার ৩য় মাস থেকে ক্ষুদে পোনার ঝাক দেখা গেলে তা মিহি ফাঁসের জাল দিয়ে অবশ্যই সরিয়ে ফেলতে হবে ।অন্যথায় আশানুরুপ উৎপাদন পাওয়া যাবে না ।
এভাবে মাছ চাষ করলে ৫-৬ মাসের মধ্যে প্রতি শতাংশে ৮-১২ কেজি মাছ পাওয়া সম্ভব ।
আয় ও ব্যয়ের হিসাব:
১০ শতাংশ আয়তনের মৌসুমী জলাশয়ে তেলাপিয়া ও নাইলোটিকা মাছ চাষের আয় ও ব্যয়ের হিসাব নিম্নরূপ:
ব্যয়:
ক্রমিক নং
ব্যয়ের খাত
টাকা
পুকুর সংস্কার
২০০/=
চুন – ১০ কেজি
১৫০/=
গোবর – ২৮০  কেজি
৩০০/=
সার – ৩ কেজি
১৭৫/=
মাছের পোনা - ৮০০ টি
৮০০/=
চাউলের কুঁড়া - ৯০ কেজি
৭০০/=
সর্বমোট
২৩২৫/=

আয়:
মোট মাছ = ৮০ কেজি
পাইকারি বাজার দর = ১০০ টাকা (প্রতি কেজি)
মোট মাছ বিক্রি = ৮০x১০০ = ৮০০০ টাকা
প্রকৃত মুনাফা:
মুনাফা = আয়-ব্যয়
        = (৮০০০-২৩২৫) টাকা
        = ৫৬৭৫ টাকা
তাই আসুন, আমরা আমাদের বাড়ির আশে-পাশের পুকুর, ডোবা, নালা গুলোকে পতিত ফেলে না রেখে মাছ চাষের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত তথা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করি এবং পাশাপাশি আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করি ।

তথ্যসূত্র: মৌসুমী পুকুরে নাইলোটিকার চাষ প্রযুক্তি, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিট্যুট, স্বাদু পানি কেন্দ্র, ময়মনসিংহ এবং ড. মো. মীর মোশাররফ হোসেন
সম্পদনা : অ্যাডমিন

২টি মন্তব্য:

  1. পুকুরের আশেপাশে বড় বড় গাছ রয়েছে, প্রচুর পাতা পড়ে পানি তো নষ্ট হয়ই ,আর পুকুরের একটা বড় অংশ সবসময় ছায়া্য থাকে, এতে কোনো সমস্যা হবে কি?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. অবশ্যই, পানি নষ্ট হওয়া এবং ছায়াবৃত থাকা এ দুইটা বড় সমস্যা । বানিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করতে হলে অবশ্যই পুকুর পাড়ের বড় বড় গাছ কেটে ফেলতে হবে ।

      মুছুন